হাজীগঞ্জের রায়চোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাদ নির্মাণে দুর্নীতি
হাজীগঞ্জ প্রতিনিধি : হাজীগঞ্জের রায়চোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলায় টিচার্স রুম নির্মাণ কাজ নিয়ে চলেছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
প্রায় ২০ লাখ টাকার এই সরকারি প্রকল্পে দায়িত্বশীলরা যথাযথ নজরদারি না করায় নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহৃত হচ্ছে
এবং স্বচ্ছতা হারিয়েছে পুরো কাজটি। এতে এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের পিইডিপি-৪ (চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি) আওতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম.এস. কাদেরকে দেওয়া হয়েছিল এই নির্মাণ কাজের দায়িত্ব।
কিন্তু সরকারি নিয়ম-নীতি ও অনুমতি না নিয়ে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবগত না করেই ঠিকাদার তৃতীয় তলার ছাদের ঢালাইয়ের কাজ শুরু করেন।
গত ২৬ জুন সকালে হঠাৎ করেই বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কাজ শুরু করে ঠিকাদারের দল।
স্থানীয়রা দেখেন, চার-পাঁচ মাস আগে আনা পুরনো সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে যা পাথরের মতো কঠিন হয়ে গেছে।
পাশাপাশি সিলেকশন বালুর বদলে নিম্নমানের ভিটি (বিটা) বালু ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ভবনের নির্মাণ মানের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি হতে পারে।
প্রধান শিক্ষিকার বক্তব্য
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিরিনা আক্তার শামীম বলেন, “আমাকে কোনো অফিস থেকেই আগে অবহিত করা হয়নি।
হঠাৎ শুনে আসতে দেখি, নির্মাণকাজ চলছে অথচ সেখানে কত অনিয়ম, দেখেই আমি চমকে গেছি।
বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিস ও ইউএনও মহোদয়ের কাছে জানালে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়।”
তিনি আরও জানান, “এখন পর্যন্ত আমি কোনো ওয়ার্কশিট পাইনি। কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে, কত আয়তনে নির্মাণ কাজ হচ্ছে, তার কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।
আমি একাধিকবার উপজেলা সার্ভেয়ার মালবিকা দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু কাজের অগ্রগতি নিয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য পাইনি।”
অন্যদিকে, উপজেলা সার্ভেয়ার মালবিকা দেবনাথের বক্তব্য, “ঠিকাদার আমাদের অনুমতি না নিয়ে কাজ শুরু করেছিল।
পরে আমি গিয়ে কিছু নতুন সিমেন্ট ও সিলেকশন বালু দিয়ে দিয়েছি।”
তবে এই বক্তব্য তার দায়িত্বের প্রতি অবহেলার দৃষ্টান্ত বহন করে। কারণ, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (ওয়ার্কশিট) না দেয়া ও তৎপরতা দেখানোর অভাব প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তায় প্রশ্ন তুলে।
প্রধান শিক্ষিকা সরাসরি মালবিকা দেবনাথকে বলেন, “বারবার অনুরোধ করেও আমাদের কাছে ওয়ার্কশিট দেয়া হয়নি, যা খুবই আশ্চর্যের বিষয়।”
এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম.এস. কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও গুরুতর। সরকারি নির্দেশনা ও প্রকৌশল বিভাগের নিয়ম অমান্য করে ঠিকাদার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
একাধিকবার ফোন করেও তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি, যা তার দায় এড়ানোর প্রবণতা ও দায়িত্বহীনতার ইঙ্গিত।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবনে আল জাহিদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতন মহল বলছেন, “সরকারি টাকায় আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব,
কিন্তু এখানে সেই ভবিষ্যৎই এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এটি শুধু অনিয়ম নয়, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।”
তারা অভিযোগ করেছেন, ঠিকাদার, সার্ভেয়ার ও দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

