সহযোগিতা বন্ধ করছে সুইজারল্যান্ড, কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে?

সহযোগিতা বন্ধ করছে সুইজারল্যান্ড, কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে?

আন্তর্জাতিক সংবাদ

untitledসহযোগিতা বন্ধ করছে সুইজারল্যান্ড, কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে?

সংবাদ ডেস্ক : সহযোগিতা বন্ধ করছে সুইজারল্যান্ড, কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে?।

বাংলাদেশ, আলবেনিয়া ও জাম্বিয়ার জন্য উন্নয়ন সহযোগিতা বন্ধ করতে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড। সুইস সরকারের ফেডারেল কাউন্সিলের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে,

সরকারের উন্নয়ন সহযোগিতা কাটছাঁটের বাস্তবায়ন করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসির।

গত সপ্তাহেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুইজারল্যান্ডে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক (ডব্লিউইএফ) সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন।

যদিও অর্থায়ন বন্ধের মতো সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া আরও আগে থেকে শুরু করা হয়।

এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের জন্য বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।

সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র পিয়ের-আলাঁ এল্টশিঙ্গার লিখিত এক বক্তব্যে বিবিসিকে জানিয়েছেন,

আগামী চার বছরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা কর্মসূচি ধাপে ধাপে বন্ধ করা হবে এবং ২০২৮ সালের শেষে বাংলাদেশ

আর সুইস উন্নয়ন সহযোগিতার (এসডিসি) অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশ থাকবে না।

কেন এই সিদ্ধান্ত?

সুইস সরকারের সংসদের বাজেট কমানোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে।

২০২৫ সালের বাজেট থেকে ১১০ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ এবং ২০২৬-২৮ অর্থবছরের জন্য ৩২১ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার।

গত ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সুইস ফেডারেল কাউন্সিল সংসদের গৃহীত উন্নয়ন সহযোগিতার বাজেট কাটছাঁটের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে জানানো হয়।

২০২৮ সালের মধ্যে সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশসহ তিনটি দেশে দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ করবে।

আবার অনেক ক্ষেত্রে ২০২৫ সাল থেকেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় অর্থায়ন বন্ধ করা হবে, যেমন জাতিসংঘের জাতিসংঘ শিক্ষা,

বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো), জাতিসংঘের এইডস কর্মসূচি (ইউএনএইডস) ও গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন (জিপিই)।

জাতিসংঘের আরও বেশ কিছু সংস্থা, বিভিন্ন সুইস বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ব্যাংক ও অভিবাসন সংক্রান্ত আন্তঃবিভাগীয় তহবিলেও ধাপে ধাপে কাটছাঁট করা হবে।

সুইস ফেডারেল কাউন্সিলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের মুখপাত্র এল্টশিঙ্গার বিবিসিকে জানিয়েছেন,

এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একই মানদণ্ড প্রয়োগ করা হয়েছে, যেটি অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

এই মানদণ্ডের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রেক্ষাপটে সুইস উন্নয়ন সহযোগিতার বিশেষ অবদান,

সুইজারল্যান্ডের দীর্ঘমেয়াদি পররাষ্ট্র নীতি (যার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত) এবং স্থানীয় চাহিদা।

মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে এই মূল্যায়ন করা হয়েছে। বক্তব্যে আরও বলা হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন ইতিবাচক ছিল।

বর্তমান সংকটের আগে দেশটি রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি করছিল।

এখনো বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা ও বিশেষ কিছু লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসূচির (যেমন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সহায়তা,

জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাস) মাধ্যমে সহায়তা অব্যাহত রাখবে, যাতে বিভিন্ন সংকট মোকাবিলা করা যায়।

বাংলাদেশে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে উপস্থিতি বজায় রাখলেও ২০২৮ সালের পর

বাংলাদেশ আর সহযোগিতার অগ্রাধিকারে থাকবে না বলা হয়েছে ওই লিখিত বক্তব্যে।

প্রাথমিক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এটাও বলা হয়েছে যে, কলম্বিয়ায় এরই মধ্যে পরিকল্পিত কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে এবং আজারবাইজানে কার্যক্রম কমানো হবে।

বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে পূর্ণ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়ার কথা।

তবে বাংলাদেশ কেন এই সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো সে প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ূন কবির বলেছেন, বাংলাদেশ কিন্তু এ ধরনের দেশ থেকে

বেশ ভালোই সহযোগিতা পায়, ফলে সংকোচন নীতিতে যেতে হলে খুব স্বাভাবিকভাবে আমাদের চেহারাটা তাদের সামনে ভেসে ওঠে।

সেই কারণেই হয়তো বাংলাদেশ পড়েছে।

বাংলাদেশ কতটা সহযোগিতা পায়?

বাংলাদেশ সুইস অর্থায়নের দিক দিয়ে একদম শীর্ষ না হলেও মোটামুটি শীর্ষ পর্যায়ের ১৫ দেশের একটি বলা যায়।।

সুইজারল্যান্ডের উন্নয়ন সহযোগিতার তালিকায় ২০২৩ সালে এশিয়ায় সর্বোচ্চ অর্থায়নে দখলকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চল, সিরিয়া,

মিয়ানমার ও আফগানিস্তানের পরে ছিল বাংলাদেশ।
সে বছর বাংলাদেশে ৩৪১ লাখ সুইস ফ্রাঁ বরাদ্দ ছিল (১ সুইস ফ্রাঁ প্রায় ১.১ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৩৪ টাকা)।

এশিয়ার বাইরে ধরলে এর চেয়ে বেশি অঙ্কে ইউরোপে ইউক্রেন, মালদোভা ও আফ্রিকায় মালি, বুরকিনা ফাসো, সোমালিয়া ও চাদ ছিল।

অর্থাৎ ২০২৩ সালের হিসেব দেখলে সুইস অর্থায়নের অন্তত ১১২টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ছিল ১১তম।

এ তথ্য সুইজারল্যান্ডের পরষ্ট্র দপ্তরের ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাটিস্টিকস ইউনিটের।

এবারের অন্য যে দুই দেশে অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা এসেছে সেসব দেশ আরও বেশ পেছনে।

আলবেনিয়া (২৬৩ লাখ ফ্রাঁ) ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয়, সবগুলো দেশের তালিকায় ২৩তম।

জাম্বিয়া আরও অনেক পেছনে এবং আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যেই ছিল ৩০ তম (২৪ লাখ ফ্রাঁ)।

বাংলাদেশ-সুইজারল্যান্ড সম্পর্ক নিয়ে সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে,

বাণিজ্য ছাড়াও বাংলাদেশে টেকসই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনা করে দেশটি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন, রোহিঙ্গা সংকট, দুর্যোগ ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলা এবং

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করার মতো অনেক ক্ষেত্রেই কাজ করছে সুইজারল্যান্ড। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন

অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনেও সহায়তা করেছে সুইজারল্যান্ড।

বাংলাদেশের জন্য প্রভাব কতটা?

বাংলাদেশে অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য সামনের দিনগুলোতে বাড়তি চ্যালেঞ্জ তৈরি করার শঙ্কা সৃষ্টি করছে।

হুমায়ূন কবির বলছিলেন, বাংলাদেশে শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, নারী উন্নয়ন এমন অনেক ক্ষেত্রেই সুইস সহযোগিতাটা অনেকটা শর্ত ছাড়াই হয়ে থাকে।

সে জায়গায় যদি এমন সহযোগিতা কমে যায় তাহলে সেটা বাংলাদেশের জন্য চাপ বাড়াবে বা কিছুটা শূন্যতা তৈরি করবে মনে করছেন তিনি।

আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যেভাবে বিশ্বব্যাপি অর্থায়ন পুনর্বিবেচনার জন্য স্থগিত করেছেন সে

প্রেক্ষাপটে আস্তে আস্তে একটা প্রবণতা পরিষ্কার হচ্ছে যে বৈদেশিক সাহায্যের ক্ষেত্রে আগে যে উদার ব্যবস্থা ছিল বা

পশ্চিমা যে উন্নত বিশ্ব তারা এটাকে যে নৈতিক মানদণ্ডের বিচারে দেখতো সেই জায়গাটা থেকে তারা সরে আসছে ধীরে ধীরে।

এর মধ্যে তারা একটা ইউটিলিটি স্ট্যান্ডার্ড বা নিজেদের প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন কিনা সেই আঙ্গিকে বিষয়গুলোকে দেখার চেষ্টা করছে।

যে কারণে অনেক দেশই এমন রিভিউ বা পুনর্বিবেচনার দিকে যেতে পারে বলে মনে করছেন হুমায়ূন কবির।

আমেরিকার সিদ্ধান্তের পর পরই অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে উন্নয়ন সংস্থাগুলো প্রকল্প বন্ধ বা স্থগিত করেছে।

অনেক ক্ষেত্রে পরিসর সীমিত করে আনা হয়েছে। সুইস সিদ্ধান্তেও ধীরে ধীরে এমন প্রভাব আরও আসার আশঙ্কা রয়েছে।

Daily Chandpur Sangbad

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *