মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি নিস্কাশন খালগুলো রূপ নিচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের খালগুলো রূপ নিচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে

উপজেলা সংবাদ মতলব উত্তর উপজেলা স্লাইড

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি নিস্কাশন খালগুলো রূপ নিচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি নিস্কাশন খালগুলো রূপ নিচ্ছে ময়লার ভাগাড়েস্টাফ রিপোর্টার : মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের খালগুলো রূপ নিচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে

উপজেলার কৃষিনির্ভর জনপদের জন্য এক সময়ের ‘জীবনরেখা’ হিসেবে বিবেচিত মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি নিস্কাশন খালগুলো আজ মারাত্মক অব্যবস্থাপনার শিকার।

নিয়মিত খনন ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে খালগুলো হারিয়েছে পানি ধারণ ও প্রবাহের স্বাভাবিক ক্ষমতা।

ফলে বর্ষা মৌসুমে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা, নষ্ট হচ্ছে ফসল, অনাবাদি পড়ে থাকছে বহু জমি।

সরেজমিনে যা দেখা গেল

সেচ প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ডি-৩ প্রধান খালসহ অধিকাংশ খালেই জমে আছে আবর্জনা ও দখলের দৌরাত্ম্য।

ছেংগারচর বাজারসংলগ্ন খালটির প্রবেশমুখ আজ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে ময়লার স্তূপে।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, যে খাল এক সময় নৌ চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হতো, সেটি এখন সংকুচিত হয়ে পরিণত হয়েছে একটি সরু ড্রেনে।

কৃষকের কণ্ঠে অসন্তোষ

বর্ষা এলেই কলাকান্দা, মোহনপুর, গজরা ইউনিয়ন ও ছেংগারচর পৌরসভার নিচু এলাকায় দেখা দেয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা।

এতে কৃষিজমিতে পানির স্তর বেড়ে যায় এবং ফসলের গোড়া পচে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

হানিরপাড় গ্রামের কৃষক লাল মিয়া জানান, “বৃষ্টি হলেই জমিতে পানি দাঁড়িয়ে যায়।

খালের মুখে ময়লা জমে থাকায় পানি নামতে পারে না। ফলনও আর আগের মতো হয় না।”

কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সাত্তার বলেন, “ডি-৩ খালটির সংস্কার শুরু হলেও ছেংগারচর বাজারের অংশটি এখনও অবহেলায় পড়ে আছে।

সামান্য বৃষ্টিতেই জমিগুলো তলিয়ে যাচ্ছে।”

স্থানীয়দের অসহায়তা ও প্রত্যাশা

ছেংগারচরের ব্যবসায়ী শরীফ উল্লাহ দর্জি বলেন, “দোকানদারদের ময়লা না ফেলার অনুরোধ করেছি।

একইসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ময়লা ও মাটি সরানোর দাবি জানিয়েছি।”

স্থানীয়দের মতে, খালপাড়ের পরিচ্ছন্নতা ও খনন কাজ ‘অসার’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কচুরিপানা সরানোর পর অল্প সময়েই আবার পুরনো অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে, যা প্রশাসনিক নজরদারির অভাবকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়।

কর্তৃপক্ষ কী বলছে?

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, প্রায় ৮০ কিলোমিটার খাল সংস্কারের কাজের জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাজের মান এবং অগ্রগতির বিষয়ে রয়েছে অস্পষ্টতা ও প্রশ্ন।

সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সলিম শাহেদ বলেন, “ডি-৩ খালসহ অন্যান্য খালের কচুরিপানা ও ময়লা অপসারণের কাজ চলছে। অনিয়ম হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, “খালগুলোর সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় জলাবদ্ধতা বাড়ছে, কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “আমি নিজে ডি-৩ খাল পরিদর্শন করেছি এবং পাউবোকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাচ্ছি, সমস্যা সমাধানে আমি নিজেও সক্রিয় আছি।”

সমাধানের পথে

এক সময়ের কৃষি উন্নয়নের প্রতীক খালগুলো এখন রূপ নিয়েছে দখল ও দূষণের করাল গ্রাসে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে চাই নিয়মিত খনন, কঠোর নজরদারি ও জনসচেতনতা। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

এই বাস্তবতা সামনে রেখেই প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা ও দ্রুত বাস্তবায়ন—না হলে কৃষকেরা হারাবে তাদের জমির উর্বরতা, আর খাদ্য নিরাপত্তা পড়বে হুমকির মুখে।

Daily Chandpur Sangbad

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *