মতলব উত্তরে বৈধ বালু ব্যবসায়ীর ড্রেজার পাইপে সশস্ত্র হামলার অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার : মতলব উত্তরে বৈধ বালু ব্যবসায়ীর ড্রেজার পাইপে সশস্ত্র হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়নের দশানী গ্রামে গতকাল শনিবার (১৭ মে) সকাল ১০টার দিকে ওই দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক ঘটনার সূত্রপাত হয়।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় এক বৈধ বালু ব্যবসায়ীর ড্রেজার পাইপে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে তা ভাঙচুর করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, নদী থেকে নিয়ম মেনে বালু উত্তোলন ও বিপণন করে আসছিলেন মো. আমান উল্ল্যা নামের এক ব্যবসায়ী।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি বৈধ ড্রেজার ও পাইপ ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। ঘটনাস্থলে, মেঘনা নদীর তীরে নির্ধারিত স্থানে স্থাপন করা তার ৩৫টি পাইপ ছিল।
সকালবেলা হঠাৎ করেই কলাকান্দা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মহসিন বেপারীর নেতৃত্বে একদল ব্যক্তি সেখানে গিয়ে পাইপগুলোতে হামলা চালায়।
স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় উপস্থিত হয়ে পাইপগুলোর ওপর একের পর এক আঘাত হানে।
এতে পাইপগুলো সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলা হয়। অভিযুক্ত দলের মধ্যে আনোয়ার বেপারী, জসিম বেপারী, সামিম, জব্বার, ইমন,
মোহাম্মদ হোসেন ও আবুল খায়ের রানার নাম উঠে এসেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হামলাকারীরা ব্যবসা পরিচালনার জন্য চাঁদা দাবি করেছিল। তাদের দাবি ছিল, এই এলাকায় বালুর ব্যবসা করতে হলে আগে টাকা দিতে হবে।
ভুক্তভোগী মো. আমান উল্ল্যার বক্তব্য
ব্যবসায়ী মো. আমান উল্ল্যা বলেন, “আমি বৈধ কাগজপত্র নিয়ে ব্যবসা করি। অথচ তারা এসে আমার ৩৫টি পাইপ একযোগে ভেঙে দিয়েছে।
প্রতিটি পাইপের মূল্য আনুমানিক ৪,৫০০ টাকা করে। এতে করে আমার প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “এটা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, বরং আমার বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রও বলা যায়।
আমি আইনের আশ্রয় নেব এবং সকল কাগজপত্রসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সামাদ বলেন, “আমি যখন তাদের বাধা দিতে যাই, তখন মহসিন ও আনোয়ার বেপারী আমার ওপর চড়াও হয় এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর আমি ভয়ে সরে আসি।”
তিনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং প্রশাসনের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এই ঘটনার পর পুরো এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, এটি নিছক একটি ভাঙচুরের ঘটনা নয়— বরং একটি সুপরিকল্পিত হামলা যার মাধ্যমে একটি বৈধ ব্যবসাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা মো. ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, “আমি দীর্ঘ ১৭ বছর দেশে ছিলাম না।
এই সময়ে কিছু নতুন লোক দলে ঢুকে নিজেদের দলীয় পরিচয়ে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। এদের কর্মকাণ্ড দলের মূলনীতি ও আদর্শের পরিপন্থী। তারা এখন চাঁদাবাজি, দখলবাজি এমনকি সহিংসতায় লিপ্ত হচ্ছে, যা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে।”
তিনি জানান, এই বিষয়ে তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অবহিত করবেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাবেন।
এই ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে গেলে অভিযুক্ত মহসিন বেপারীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পুলিশের বক্তব্য
এদিকে মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল হক বলেন, “আমরা এখনো পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।
অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের কোনো অপরাধ সংগঠিত হয়ে থাকলে, দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
তারা দ্রুত প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

