মতলব উত্তরে ঘুষ ছাড়া সেবা মিলছে না ইউনিয়ন ভূমি অফিসে
মতলব উত্তর প্রতিনিধি : মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সেবা নিতে গেলে প্রায়শই ভুক্তভোগীদের অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, জমির মিউটেশন বা অন্যান্য ভূমি সংক্রান্ত কাজে আট থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত, অন্য সাধারণ সেবার জন্য ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ ছাড়া অফিসের কাজ অনেক সময় এগোয় না।
কলাকান্দা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তহশিলদার সৈয়দ আহাম্মদ এর বিরুদ্ধে এই ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শুধু কলাকান্দা নয়, পুরো মতলব উত্তরের অন্যান্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অনুরূপ অবস্থা বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগীরা জানাচ্ছেন, ঘুষ দিলে কাজ হয়, না দিলে ফাইলই অচল থাকে। জমির নামজারি, খতিয়ান প্রদর্শন, তদন্ত প্রতিবেদন, খাজনা আদায়-প্রতিটি ধাপে ধাপে ঘুষের দাবি থাকে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে আমিনুল ইসলাম আল আমিন নামের এক সেবা গ্রহীতা জমির মিউটেশনের জন্য কলাকান্দা ইউনিয়ন অফিসে গেলে তহশিলদার অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে, অভিযোগ অনুযায়ী, মিউটেশনের ফাইল জানালা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় এবং ফাইলের উপর পানি ঢেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও তাকে দোতলা থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকির কথাও বলা হয়েছে। পরে কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মেহেদী হাসান পরিস্থিতি সমাধান করেন।
কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইদুর রহমান সিপলু জানান, “ভূমি অফিসে ঘুষ না দিলে কোনো ফাইলই এগোয় না। কমপক্ষে ৬–৭ হাজার টাকা দিতে হয় মিউটেশন কাজ করতে।” তিনি আরও বলেন, “যারা অফিসে গিয়েছেন, তারা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।”
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেছেন, হানিরপাড় গ্রামের আমানউল্লাহ ও দশানী গ্রামের আল-আমীন বেপারী জানিয়েছেন, তাদের জমির মিউটেশনের জন্য অতিরিক্ত সাত হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।
প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বলেন, “আমিনুল ইসলাম আল আমিনের সঙ্গে ভূমি কর্মকর্তার আচরণ খারাপ হওয়ায় আমি বিষয়টি মীমাংসা করেছি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেবা প্রার্থীর অভিযোগ, “বাবা মারা যাওয়ার পর বাবার নামে সম্পত্তি নামজারি করতে গিয়েছিলাম। কয়েকবার অফিসে যাওয়ার পরও কোনো কাজ হয়নি। পরে তহশিলদার আমাকে বললেন, অফিস খরচ না দিলে কাজ হবে না। বাধ্য হয়ে ৭ হাজার টাকা দিয়ে ফাইল সম্পন্ন করতে হয়েছে।”
মতলব সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিল্লোল চাকমা বলেন, “অনলাইন সেবা চালু হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই দুর্নীতি কমেছে। কিন্তু অনেকেই সঠিকভাবে সিস্টেম বুঝতে না পারায় দালালদের শিকার হন এবং অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয়। সরাসরি এসিল্যান্ড অফিসে গেলে এসব ঝামেলা কমে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি জানান, “ঘটনাটি যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

