ফিলিস্তিনি বাবার হৃদয়বিদারক আর্তি : ‘আমাদের সন্তানরা নিঃশব্দে নিঃশেষ হচ্ছে’

ফিলিস্তিনি বাবার হৃদয়বিদারক আর্তি : ‘আমাদের সন্তানরা নিঃশব্দে নিঃশেষ হচ্ছে’

আন্তর্জাতিক সংবাদ জাতীয় সংবাদ

ফিলিস্তিনি বাবার হৃদয়বিদারক আর্তি : ‘আমাদের সন্তানরা নিঃশব্দে নিঃশেষ হচ্ছে’

ফিলিস্তিনি বাবার হৃদয়বিদারক আর্তি : ‘আমাদের সন্তানরা নিঃশব্দে নিঃশেষ হচ্ছে’সংবাদ ডেস্ক : ফিলিস্তিনি বাবার হৃদয়বিদারক আর্তি : ‘আমাদের সন্তানরা নিঃশব্দে নিঃশেষ হচ্ছে’।

উত্তর গাজার জাবালিয়ার একটি ত্রাণ রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শত শত মানুষের ভিড়ে একটি করুণ দৃশ্য প্রতিদিন চোখে পড়ে।

প্লাস্টিকের পাত্র হাতে ছোট ছোট শিশুরা এক থালা গরম স্যুপের আশায় কাঁপতে কাঁপতে দাঁড়িয়ে আছে।

খাদ্যের জন্য মানুষের এই হাহাকার সেখানে যেন প্রতিদিনের স্বাভাবিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই ভিড়েই ছিলেন মাহমুদ আল-হাও, এক নিরুপায় বাবা, যিনি প্রতিদিন ধ্বংসস্তূপে পা রেখে খাবারের সন্ধানে বের হন।

তাঁর চার সন্তান এবং ভাইয়ের আরও দুই সন্তানের জীবনের ভার তাঁর কাঁধে।

প্রতিদিন সকালে লাইনে দাঁড়িয়ে একবেলার খাবার জোগাড় করাই এখন তাঁর দিনের সবচেয়ে বড় কাজ।

“সকাল আটটা থেকে দাঁড়িয়ে আছি,” বলেন ৩৯ বছর বয়সী হাও, “ছয়জনের জন্য এক প্লেট স্যুপ নিচ্ছি, যেটা একজনের জন্যও যথেষ্ট না।

মেয়েটা অসুস্থ—কিছুই করতে পারছি না। এখানে রুটি পর্যন্ত নেই।”

ইসরায়েলি অবরোধের ফলে মার্চ মাস থেকে গাজায় বন্ধ রয়েছে খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং জ্বালানি প্রবেশ।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভাষ্যমতে, ২৩ লাখ মানুষের এই অঞ্চলটি এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।

যদিও কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক সম্প্রতি গাজায় প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে, জাতিসংঘ জানায়, সেগুলোর কোনও কার্যকর বিতরণ হয়নি।

অপরদিকে, ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

গত সপ্তাহে নতুন করে হামাসের বিরুদ্ধে চালানো অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি।

অমানবিক বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য গাজায় মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেও ইসরায়েল জানিয়েছে,

তাদের অবরোধের উদ্দেশ্য হল ত্রাণ সহায়তা যেন হামাসের হাতে না পড়ে তা নিশ্চিত করা।

অপরদিকে হামাস দাবি করছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ভিক্ষকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

এই সহিংসতার সূত্রপাত হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাসের এক হামলায় ইসরায়েলে ১,২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হন।

এরপর থেকেই ইসরায়েলি বাহিনীর ধারাবাহিক সামরিক অভিযানে গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৩ হাজারেরও বেশি মানুষ, জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের চেয়ে খাদ্যলাইনেই জীবন

হাওয়ের এক কামরার ঘরে বাস করে তার অসুস্থ মেয়ে, হাঁপানি ও হৃদরোগে ভুগছে সে। হুইলচেয়ারে চলাফেরা করা ভাতিজিকেও তিনি দেখেন। প্রতিদিন ঘরে ফিরে তিনি ছোট টিনের পাত্রে স্যুপ ভাগ করে দেন। বাচ্চারা চুপচাপ খায়—কোনো শব্দ নেই, কোনো অভিযোগ নেই।
“এই এক থালা স্যুপই আমাদের সকালের, দুপুরের আর রাতের খাবার,” বলেন হাও। “গতকাল কিছুই ছিল না। আজ অন্তত কিছু পেয়েছি, এ জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।”
তার শেষ আকুতি, “আমি চাই, বিশ্ববাসী আমাদের পাশে দাঁড়াক। আমাদের সন্তানরা নিঃশব্দে মারা যাচ্ছে।”

Daily Chandpur Sangbad

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *