প্রবাসী ছেলের ঋণের কারণে অপবাদ সহ্য করতে না পেরে বাবার আত্মহত্যা
জাহাঙ্গীর আলম প্রধান : প্রবাসী ছেলের ঋণের কারণে অপবাদ সহ্য করতে না পেরে বাবার আত্মহত্যা করেছে।
মতলব দক্ষিণ উপজেলায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। প্রবাসী ছেলের ঋণের দায়ভার ও সামাজিক অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন এক বৃদ্ধ পিতা,
আব্দুল হান্নান প্রধান (৬০)। ঘটনাটি ঘটেছে ২০ জুলাই, রবিবার বিকেলে নারায়ণপুর পৌরসভার পদুয়া গ্রামে।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
স্থানীয় সূত্র, পরিবার এবং পুলিশ জানায়, নিহত আব্দুল হান্নান প্রধানের ছেলে সুলতান হোসেন ওরফে রুবেল দীর্ঘদিন ধরে স্পেনে কর্মরত।
সেই সূত্রে তিনি তার এক চাচাতো ভাইকে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার বিনিময়ে স্পেনে পাঠান এবং পরে আরও কয়েকজনকে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করেন।
রুবেল স্পেনে অবস্থানকালে মাদারীপুরের কামরুল ইসলাম নামের এক মানবপাচারকারীর সঙ্গে পরিচিত হন।
পরে কামরুলের সহায়তায় রুবেল নিজ এলাকা থেকে আরও সাতজনকে স্পেনে পাঠাতে প্রায় দেড় কোটি টাকা সংগ্রহ করেন এবং তা কামরুলের হাতে তুলে দেন।
দুঃখজনকভাবে, এই সাতজনের মধ্যে চারজন দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন, কারণ স্পেনে পৌঁছানোর পর তাদের জন্য কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।
আর বাকি তিনজনের এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণ দাবি করে আব্দুল হান্নান প্রধানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।
বিষয়টি আরও জটিল হয়ে পড়ে যখন রুবেল ও তার সহযোগী কামরুল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
চরম চাপ ও মানসিক যন্ত্রণায় ভুগে আব্দুল হান্নান প্রধান শেষমেশ গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
মরিয়ম বেগমের বক্তব্য
নিহতের স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, তার স্বামী পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে জায়গা-জমি বিক্রি করে প্রায় ৬০ লাখ টাকা ফেরত দেন।
তবুও ক্ষুব্ধ পাওনাদারদের চাপ দিন দিন বাড়তে থাকায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।
এ বিষয়ে মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেহ আহমেদ বলেন,
“বিদেশে লোক পাঠিয়ে কাজ না দেওয়ায় অনেকে ক্ষিপ্ত হয়ে আব্দুল হান্নানের কাছে টাকা ফেরত চান।
তিনি কিছু অর্থ ফেরত দেন, তবে পুরো টাকা না দিতে পারায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে।”
এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের ট্র্যাজেডি নয়, বরং দেশে বিদেশগমন ও আদম ব্যবসাকে কেন্দ্র করে কতটা জটিলতা তৈরি হতে পারে,
তার একটি বাস্তব চিত্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এ ধরনের প্রতারণার চক্র ভেঙে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা,
যাতে আর কোনো পরিবার এমন মর্মান্তিক ঘটনার শিকার না হয়।

