পাওনা টাকা আদায়ে থানায় অভিযোগ, গরু নিতে গিয়ে জনতার হাতে আটক তিনজন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাওনা টাকা আদায়ে থানায় অভিযোগ, গরু নিতে গিয়ে জনতার হাতে আটক তিনজন।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় পাওনা টাকা ফেরত না পেয়ে থানায় অভিযোগ করেছিলেন এক ব্যক্তি।
কিন্তু দীর্ঘদিনেও সমাধান না হওয়ায়, নিজ উদ্যোগে দেনাদারের বাড়িতে গিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন তিনি।
টাকা না পেয়ে গোয়ালঘর থেকে গরু নেওয়ার সময় স্থানীয়রা তাকে এবং তার সঙ্গে থাকা দুই সহযোগীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
মতলব দণি উপজেলার বাইশপুর গ্রামের বাসিন্দা হাজী মো. খবির প্রধান একজন ব্যবসায়ী। তিনি ফরাজি কান্দি ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের মোজাম্মেল মৃধার
ছেলে মো. খবির মৃধা, ইসলামাবাদ ইউনিয়নের নূরু পাটোয়ারীর ছেলে ভেনু পাটোয়ারী ও মালু পাটোয়ারীকে ব্যবসার জন্য ৫০% লাভের চুক্তিতে ৯ লাখ টাকা দেন।
কিন্তু দুই বছর পার হয়ে গেলেও দেনাদাররা টাকা ফেরত দেননি। উল্টো বিভিন্ন অজুহাতে টাকা আত্মসাতের ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ করেন খবির প্রধান।
বিষয়টি নিয়ে তিনি ১৫ জানুয়ারি মতলব উত্তর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
থানায় অভিযোগের পর দীর্ঘ ১৬ দিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি বলে দাবি করেন হাজী খবির প্রধান।
পুলিশ তাকে জানায়, অর্ধেক টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু পুরো টাকা ফেরত না পাওয়ায় তিনি ১ ফেব্রুয়ারি সকালে
নিজেই দেনাদারের বাড়িতে যান টাকা ফেরত আনার জন্য।
হাজী খবির প্রধানের বক্তব্য
সকালে হাজী খবির প্রধান তার ড্রাইভার সাদ্দাম ও সহযোগী রাব্বিকে নিয়ে আমিরাবাদ গ্রামে দেনাদার মোজাম্মেল মৃধার বাড়িতে যান।
সেখানে গিয়ে টাকা না পেয়ে, তারা মোজাম্মেলের গোয়ালঘর থেকে একটি গরু নিয়ে আসার চেষ্টা করেন।
এ সময় স্থানীয়রা বিষয়টি বুঝতে পেরে তাদের বাধা দেয় এবং পরে তিনজনকেই আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
আটকের পর হাজী খবির প্রধান বলেন,”আমি থানায় অভিযোগ করেছিলাম, কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
উল্টো আমাকে বলে অর্ধেক টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমি কোনো টাকা না পেয়ে নিজের উদ্যোগে টাকা ফেরত আনতে যাই।
সেখানে গিয়ে টাকা না পেয়ে, গরু নিয়ে যাওয়ার অভিনয় করি যাতে তারা ভয় পেয়ে টাকা ফেরত দেয়। কিন্তু স্থানীয়রা আমাকে ধরে পুলিশে দেয়।
এখন পুলিশ আমাদের ভুয়া ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ) বানিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।”
পুলিশের বক্তব্য
এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন বলেন, “যার কাছে টাকা পাওনা, সে বর্তমানে অন্য একটি মামলায় জেল হাজতে রয়েছে।
তার আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তিনি মুক্তি পেলেই পাওনা টাকা ফেরতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মতলব উত্তর থানার ওসি মো. রবিউল হক বলেন, “স্থানীয়রা তিনজনকে আটকের পর আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে।
আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি এবং আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
স্থানীয়দের বক্তব্য
এ ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
কেউ বলছেন, হাজী খবির প্রধান পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ভুল পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন, আবার কেউ মনে করছেন,
থানায় অভিযোগ করার পরও ১৬ দিন ধরে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া পুলিশের ব্যর্থতা।
এই ঘটনার সঠিক বিচার হবে কিনা, পাওনা টাকা আদায় করা সম্ভব হবে কিনা এ বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
তবে পুলিশ বলছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

