জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে গৃহবন্দী, স্ত্রীর জালিয়াতি ফাঁস করলেন ইউএনও

জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে গৃহবন্দী, স্ত্রীর জালিয়াতি ফাঁস করলেন ইউএনও

উপজেলা সংবাদ সদর উপজেলা স্লাইড

জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে গৃহবন্দী, স্ত্রীর জালিয়াতি ফাঁস করলেন ইউএনও

জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে গৃহবন্দী, স্ত্রীর জালিয়াতি ফাঁস করলেন ইউএনওস্টাফ  রিপোর্টার : জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে গৃহবন্দী, স্ত্রীর জালিয়াতি ফাঁস করলেন সদর উপজেলা ইউএনও ।

চাঁদপুরে ঘটে যাওয়া এক হৃদয়বিদারক ও রোমহর্ষক ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজন তালুকদার,

যিনি জীবিত থাকা সত্ত্বেও সরকারি নথিতে মৃত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তার স্ত্রী অসীমা তালুকদার এই ভুয়া তথ্যে ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা আত্মসাৎ করে আসছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো,

এই মুক্তিযোদ্ধাকে দীর্ঘদিন গৃহবন্দী করে একটি খাটের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল যেন কেউ তার জীবিত থাকা সম্পর্কে জানতে না পারে।

একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুপুরে সরেজমিন তদন্তে যান চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাখাওয়াত জামিল সৈকত।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, মুক্তিযোদ্ধা সুজন তালুকদারকে ঘরের একটি কক্ষে খাটের সঙ্গে বেঁধে রাখা অবস্থায় পাওয়া যায়।

ইউএনও স্বচক্ষে এমন দৃশ্য দেখে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন এবং সঙ্গে সঙ্গে তার বাঁধন খুলে দেন।

ইউএনও জানান, সুজন তালুকদারের স্ত্রী অসীমা ২০২০ সাল থেকেই ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে তাকে মৃত দেখিয়ে ভাতা উত্তোলন করে আসছিলেন।

অথচ সুজন তখনও জীবিত ছিলেন এবং অসহায় অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছিলেন।

ঘটনার দিন প্রশাসনের আগমন টের পেয়ে অসীমা বাসা ছেড়ে পালিয়ে যান।

ইউএনও বলেন, “জাল কাগজপত্র তৈরি ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎ একটি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ।

আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবো।” এ সময় তিনি সাংবাদিকদের তথ্য সরবরাহের জন্য ধন্যবাদ জানান।

থানা ও ব্যাংকের তথ্য

চাঁদপুর সদর মডেল থানার এসআই মজিবুর রহমান জানান,

মুক্তিযোদ্ধার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা মাহবুব আলম জানান, সুজন তালুকদারকে মৃত দেখিয়ে তার স্ত্রী মাসিক ২০ হাজার টাকা, দুই ঈদের ১০ হাজার করে বোনাস, এবং বৈশাখী ভাতা সহ একাধিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন।

সুজনের নাম এখনো সরকারি মুক্তিযোদ্ধা তথ্য ব্যবস্থাপনায় মৃত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।

পরিবারের আরও অভিযোগ

সুজন তালুকদারের ভাতিজি বিপাশা তালুকদার জানান, “আমার কাকুকে মৃত দেখিয়ে সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছে কাকি। ওনি তাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছেন।” সুজনের বৌদি কল্পনা তালুকদার বলেন, “ওনার স্ত্রী তাকে দীর্ঘদিন ধরে গৃহবন্দী করে রেখেছে, যাতে কেউ তার জীবিত থাকা দেখতে না পারে।”

অসীমার প্রতিক্রিয়া

অভিযোগের বিষয়ে অসীমা বলেন, “আমি তার চিকিৎসায় টাকা খরচ করেছি। বেশি চাপ দিলে আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না।”

জেলা প্রশাসকের প্রতিশ্রুতি

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, “যদি সত্যি রাষ্ট্রের সাথে প্রতারণা হয়ে থাকে, তাহলে ভাতা বন্ধসহ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে পুরস্কৃত করা হবে। প্রতারক যতই কৌশল করুক, তাকে আইনের আওতায় আনতেই হবে।”

এই ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তির দুর্ভোগ নয়, বরং গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধার এমন করুণ দশা দেশের বিবেককে নাড়িয়ে দেয়। এখন সময় এসেছে দৃষ্টান্তমূলক আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন জঘন্য অপরাধ করার সাহস না পায়।

Daily Chandpur Sangbad

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *