চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি, রোগীদের ভোগান্তি চরমে

চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি, রোগীদের ভোগান্তি চরমে

উপজেলা সংবাদ সদর উপজেলা

চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি, রোগীদের ভোগান্তি চরমে

চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি, রোগীদের ভোগান্তি চরমেস্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি, রোগীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বহুদিন ধরেই চলেছে টিকিট বাণিজ্য,

যার ফলে প্রতিদিনই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। সরকার নির্ধারিত মাত্র ৫ টাকার

পরিবর্তে এই টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা করে। কেউ কেউ আবার ভর্তি ফি বাবদ ২০ থেকে ৩০ টাকাও গুনছেন।

প্রায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী থেকেও রোগীরা আসেন।

অথচ অনেকেই জানেন না যে জরুরি টিকিটের নির্ধারিত মূল্য মাত্র ৫ টাকা। টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীরা সরকারি নির্দেশ অমান্য করে নিয়মিত অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক।

‘অভাব পূরণে’ অতিরিক্ত টাকা দাবি?

জরুরি বিভাগের কাউন্টারে দায়িত্ব পালনকারী একাধিক স্টাফ জানিয়েছেন, মাঝে মাঝে খাতা, কলম বা অন্যান্য সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়,

যা কিনতে তারা নিজেরাই অর্থ ব্যয় করেন। সেই খরচ পুষিয়ে নিতেই অতিরিক্ত টাকা রাখা হয়। এমন যুক্তি দিয়ে তারা এই অনিয়মকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বর্তমানে জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন সাতজন স্বাস্থ্য সহকারী—লিটন চন্দ্র নন্দী, মাহবুব,

মাহফুজুর রহমান, বাশার, সাকিল, সাইফুল ও রায়হান। এই টিকিট থেকে আদায়কৃত বাড়তি অর্থ নিজেদের মধ্যেই ভাগ করে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নিয়মভঙ্গের স্বীকারোক্তি

গত ১০ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেড় শতাধিক রোগী জরুরি বিভাগের টিকিট সংগ্রহ করেন,

যেখানে প্রত্যেকের কাছ থেকেই নেওয়া হয়েছে ১০ টাকা। ওই দিন দুপুরে ইনচার্জ সাকিল এবং সহকারী লিটন চন্দ্র নন্দী সরাসরি স্বীকার করেন যে

তারা সরকারি ৫ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা নিচ্ছেন। তাদের দাবি, প্রতিদিন ২০০–৩০০ জন রোগী টিকিট কাটেন এবং

সরকারি দপ্তরের পরিচয় দেওয়া রোগীদের কাছ থেকে তারা কোনো ফি নেন না।

রোগীদের ক্ষোভ

ফরিদগঞ্জ থেকে আসা রোগী বিকাশ বলেন, “আমি জানতাম টিকিট ১০ টাকা, সবসময় তাই দিয়েছি। আজ জানলাম আসল ফি মাত্র ৫ টাকা। এটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।”

একইভাবে শরীয়তপুরের বাসিন্দা উম্মে কুলসুম জানান, “বাবাকে ভর্তি করাতে গিয়ে টিকিট বাবদ ৩০ টাকা দিয়েছে। আসল ফি কী, তা আমাদের জানার সুযোগ নেই।”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া

হাসপাতালের হেলথ এডুকেটর আমিনুল ইসলাম বিষয়টি সম্পর্কে বলেন, “সরকারি নির্দেশনায় টিকিট ফি ৫ টাকা। যেসব স্টাফ অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন,

তারা অনিয়ম করছেন। ব্যবহৃত সরঞ্জাম হাসপাতাল থেকেই সরবরাহ করা হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ কে এম মাহবুবুর রহমান স্পষ্টভাবে বলেন, “জরুরি বিভাগে নির্ধারিত ফি ৫ টাকা, অতিরিক্ত নেওয়ার কোনো বৈধতা নেই।

সিলমোহরযুক্ত ৫ টাকার টিকিট ব্যবহারের নির্দেশ রয়েছে। যারা নিয়ম লঙ্ঘন করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় একটি স্পষ্ট অনিয়ম এবং মানবিকতার পরিপন্থী।

যেখানে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ সেবার আশায় হাসপাতালের দ্বারস্থ হন, সেখানে তাদের সঙ্গে এমন আচরণ অনভিপ্রেত।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও সঠিক পদক্ষেপই পারে এই অনিয়ম বন্ধ করতে।

Daily Chandpur Sangbad

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *