চাঁদপুর জেলা কারাগারে ঈদুল আযহা উদযাপনে ব্যতিক্রমী আয়োজন
স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুর জেলা কারাগারে ঈদুল আযহা উদযাপনে ব্যতিক্রমী আয়োজন।
এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য ছিল কারাবন্দিদের মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া এবং তাদের মানসিক সুস্থতা ও সামাজিক পুনর্বাসনের অনুভূতি জাগিয়ে তোলা।
ঈদের দিন উৎসবমুখর পরিবেশ
ঈদের সকাল শুরু হয় কারাগার প্রাঙ্গণে ঈদের জামাতের মাধ্যমে, যেখানে অংশ নেন কারাগারের সকল বন্দি।
নামাজ শেষে পরিবেশন করা হয় উন্নতমানের খাবার, যা প্রায় ৬০০ বন্দির জন্য প্রস্তুত করা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—সাধারণ বন্দিদের পাশাপাশি কারাগারে থাকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও (ভিআইপি) একই ধরনের খাবার গ্রহণ করেন, যা উৎসবের সমতা ও মানবিকতার বার্তা দেয়।
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ
বন্দিদের জন্য ঈদের আনন্দ শুধু খাবারে সীমাবদ্ধ ছিল না। তাদের জন্য ছিল পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের বিশেষ সুযোগ।
প্রত্যেক বন্দিকে ২০ মিনিট করে সরাসরি স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার এবং ফোনে পাঁচ মিনিট কথা বলার ব্যবস্থা রাখা হয়।
এমন মানবিক পদক্ষেপ বন্দিদের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং আত্মিক প্রশান্তি দিয়েছে পরিবার ও প্রিয়জনদের।
বিশেষ মেনুতে ছিল স্বাদ ও যত্নের ছোঁয়া
ঈদের বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে তুলতে খাবারের তালিকাতেও ছিল বৈচিত্র্য।
সকালে দেওয়া হয় পায়েস ও মুড়ি। দুপুরে পরিবেশিত হয় সুস্বাদু মুরগির রোস্ট, পোলাও, গরু ও খাসির মাংস, সালাদ, পান-সুপারি ও মিষ্টি।
রাতে বন্দিদের জন্য ছিল ভাত, মাছ ও আলুর দম।
ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে অংশগ্রহণ
ঈদের পরদিন থেকে বন্দিদের জন্য আয়োজন করা হয় বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।
এতে অংশ নিয়ে বন্দিরা কিছুটা সময় মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠার সুযোগ পান।
একইসঙ্গে আরও তিনদিন ধরে চালু রাখা হয় পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের ব্যবস্থা।
প্রশাসনের তদারকি ও প্রশংসা
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন নিজে উপস্থিত থেকে খাবার পরিবেশন কার্যক্রম তদারকি করেন এবং বন্দিদের জন্য প্রস্তুত করা খাবারের মানের প্রশংসা করেন।
সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুপ্রভাত চাকমা।
কারা কর্তৃপক্ষের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি
জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন ভূঞা জানান, এই আয়োজন কারা মহাপরিদর্শকের নির্দেশনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হয়।
তিনি বলেন, “বন্দিদের শুধুমাত্র শাস্তির মধ্যেই আবদ্ধ না রেখে তাদের মানবিকতা জাগিয়ে তুলতে এবং সামাজিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এই ধরনের আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ।”
এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ প্রমাণ করে, কারাগার শুধুই শাস্তির স্থান নয়—বরং এটি হতে পারে সংশোধনের একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম।
সমাজে ফিরিয়ে আনতে বন্দিদের এমন মানবিক পদক্ষেপ ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করে একটি আলোকিত পথ।

