কচুয়ায় মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, একজন গ্রেফতার
রাজিব সরকার : কচুয়ায় মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে যুবককে কুপিয়ে হত্যা। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কচুয়া উপজেলার বিতারা গ্রামে এক হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ডে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শনিবার রাতের এই নৃশংস ঘটনার পেছনে রয়েছে পূর্বের একটি নারীকেন্দ্রিক বিরোধ।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশের বরাতে জানা গেছে, পরিকল্পিতভাবে নুরুল হক (৪৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পটভূমি
নিহত নুরুল হক ছিলেন বিতারা গ্রামের মৃত সুলতান মিয়ার পুত্র।
তার পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, চার বছর আগে একটি পারিবারিক বিরোধের সূত্রপাত হয়েছিল, যা নারীকেন্দ্রিক কিছু ভুল বোঝাবুঝি থেকে শুরু হয়। দীর্ঘদিন এই বিরোধ প্রকাশ্যে না এলেও সম্প্রতি তা আবার নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
ঘটনার বিবরণ
শনিবার রাত প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে, স্থানীয় ওসমান গনির ছেলে জাহাঙ্গীর আলম এবং গ্রাম পুলিশ জালাল উদ্দিন মুঠোফোনে নুরুল হককে তাদের বাড়িতে ডেকে নেন।
এরপর যখন তিনি নিজ বাড়িতে ফেরার পথে, পার্শ্ববর্তী একটি নির্জন স্থানে ওঁৎ পেতে থাকা শুক্কুর আলী পেছন থেকে অতর্কিতে তার ওপর হামলা চালায়।
ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
নিহত নুরুল হকের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে সাচার সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যান, তবে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশি তৎপরতা ও মামলা
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে কচুয়া থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে তা ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।
রবিবার সকালে নিহতের স্ত্রী জাহানারা বেগম বাদী হয়ে কচুয়া থানায় তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার প্রধান অভিযুক্ত শুক্কুর আলী, সহযোগী জাহাঙ্গীর আলম এবং গ্রাম পুলিশ জালাল উদ্দিন।
এর মধ্যে গ্রাম পুলিশ জালালকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করেছে পুলিশ। বাকি দু’জন পলাতক থাকলেও তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পরিবার ও এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া
নিহতের পরিবারের সদস্যরা এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
নিহতের দুই বোন, রাশিদা বেগম ও তাসলিমা বেগম, জানান—“আমাদের ভাইকে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
স্থানীয় এলাকাবাসীও এই ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির পাশাপাশি পলাতকদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশের বক্তব্য
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুল ইসলাম বলেন,
“নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।
আমরা ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি।”
এই নির্মম হত্যাকাণ্ড কেবল একটি ব্যক্তিগত বিরোধের ফল নয়, বরং তা গ্রামের সামাজিক নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলার দিক থেকেও বড় এক প্রশ্নচিহ্ন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত তদন্ত শেষ করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেদিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

