কচুয়ায় চাঁদা না দেওয়ায় রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তারের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার : কচুয়ায় চাঁদা না দেওয়ায় রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠেছে কচুয়া থানার এক সহকারী উপ-পরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের দাবি, এসআই জাহাঙ্গীর নিয়মিতভাবে সাধারণ মানুষকে চাপ প্রয়োগ করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছেন এবং টাকা না দিলে তাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে গ্রেফতার করছেন।
সম্প্রতি এ ধরনের একটি অভিযোগ নিয়ে কচুয়ার ইসলামপুর গ্রামের দিনমজুর মোস্তফা কামালের পরিবারের পক্ষ থেকে চাঁদপুরের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
অভিযোগটি করেছেন মোস্তফার ছোট ভাই, সাবেক ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা ও বর্তমানে যুব অধিকার আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী শাহজালাল।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
অভিযোগ অনুযায়ী, ২২ মে গভীর রাতে ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা কামালকে তার বাড়ি থেকে আটক করেন এসআই জাহাঙ্গীর।
পরিবারের দাবি, পুলিশ পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ওসির নির্দেশের কথা বলে। পরদিন থানায় গিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানেন,
এসআই জাহাঙ্গীর তাদের কাছে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা, পরে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় মোস্তফা কামালকে ২০২৪ সালের
৪ আগস্ট চাঁদপুর শহরের একটি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি করে আদালতে পাঠানো হয়।
শাহজালাল বলেন, “আমার ভাই কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি একজন সাধারণ ইলেকট্রিশিয়ান,
যিনি পরিশ্রম করে আমাদের সংসার চালান। অথচ মিথ্যা মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে শুধুমাত্র চাঁদা না দেওয়ার কারণে।”
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণও এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কচুয়ার একাধিক বিএনপি নেতার মতে,
মোস্তফা কামাল রাজনীতি বিমুখ একজন শ্রমজীবী মানুষ, যিনি দলমত নির্বিশেষে সবার বাসাবাড়িতে বৈদ্যুতিক কাজ করতেন।
যুব অধিকার আন্দোলনের স্থানীয় নেতা মহিউদ্দিন বলেন, “এভাবে একজন নিরীহ মানুষকে ফাঁসানো চরম দুঃখজনক।
আমরা এমন পুলিশ সদস্য চাই না, যারা জনসেবার বদলে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত।”
গণঅধিকার পরিষদের চাঁদপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব মাহমুদুল হাসান জানান, শাহজালাল দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র ও যুব অধিকার আন্দোলনে যুক্ত।
তার নিরীহ ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে এবং যথাযথ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।
কচুয়া আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা এনায়েত হাসিব বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে ওসির সঙ্গে কথা বলেছি।
তিনি বিষয়টি দুঃখজনক বলে স্বীকার করেছেন এবং এসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের একজন নেতা তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন,
“জনতার টাকায় পরিচালিত এই বাহিনীর একমাত্র দায়িত্ব হওয়া উচিত জনসেবা ও মানবাধিকার রক্ষা।
জনতার পুলিশ হতে হলে পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে হতে হবে দায়িত্বশীল, ন্যায়পরায়ণ ও স্বচ্ছ।”
এসআই জাহাঙ্গীরের প্রতিক্রিয়া ও পুলিশ প্রশাসনের অবস্থান
মোবাইলে যোগাযোগ করলে এসআই জাহাঙ্গীর প্রাথমিকভাবে ওসির নির্দেশে মোস্তফা কামালকে আটক করার কথা স্বীকার করলেও পরে তিনি চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি আরও দাবি করেন, মোস্তফা কামালের ছবি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে রয়েছে এবং তিনি রাজনৈতিকভাবে যুক্ত।
তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, “২৮ মে আমি অভিযোগটি পেয়েছি। ইতিমধ্যে তদন্তের জন্য বিষয়টি মতলব সার্কেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে যদি এমন অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তা দেশের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। বিষয়টির যথাযথ তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণই পারে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে।

