ঈদের ছুটিতে উৎসবের রঙে রঙিন মতলবের মেঘনা পাড়
মতলব উত্তর প্রতিনিধি : ঈদের ছুটিতে উৎসবের রঙে রঙিন মতলবের মেঘনা পাড়।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা নদীর তীরজুড়ে ঈদের ছুটিতে বইছে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের স্রোত।
প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে হাজারো পর্যটক ছুটে এসেছেন মোহনপুর, এখলাছপুর, আমিরাবাদ ও ষাটনল এলাকায়, শুধু ঈদের খুশি ভাগাভাগি করে নিতে নয়—
বরং প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে কিছুটা প্রশান্তি খুঁজে পেতে।
দীর্ঘ ছুটির সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে দলে দলে মানুষ ছুটে এসেছে নদীর তীরবর্তী এই জনপ্রিয় স্থানগুলোতে।
কেউ এসেছেন নদীর চর ঘুরে দেখতে, কেউ আবার সময় কাটাচ্ছেন ব্লকঘেরা মেঘনার তীরে বসে—উপভোগ করছেন নদীর ঢেউ, মৃদু বাতাস আর সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
স্থানীয়রা জায়গাটিকে ভালোবেসে ডাকছেন ‘মিনি কক্সবাজার’।
ঈদের দিন থেকে শুরু করে টানা এক সপ্তাহজুড়ে ভিড় লেগেই আছে মেঘনা পাড়ে।
জনপ্রিয় ঈদ-বিনোদন গন্তব্য
বিশেষ করে মোহনপুর, এখলাছপুর ও আমিরাবাদে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় যেন প্রমাণ করে, এই জায়গা এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ঈদ-বিনোদন গন্তব্য।
এমন চিত্র দেখা গেছে দিনে যেমন, তেমনি সন্ধ্যার পরেও।
নদীর তীরঘেঁষে বসানো ব্লকগুলোতে ভিড় করেছেন নারী-পুরুষ, শিশুরা।
কেউ আসছেন ব্যক্তিগত গাড়িতে, কেউবা সিএনজি, মোটরসাইকেল বা ট্রলারে।
এতে যেমন স্থানীয় চালকদের আয় বেড়েছে, তেমনি সুযোগ নিচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারাও।
মুড়ি, চানাচুর, ফুসকা, আইসক্রিম—সবকিছুরই বিক্রি বেড়েছে ঈদের এই উৎসবে।
বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এখলাছপুর নয়কান্দি ও মোহনপুর।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ অঞ্চল পর্যটকদের মুগ্ধ করেছে বারবার।
বিকেলে নদীর ওপারে সূর্য অস্ত যাওয়ার মুহূর্ত যেন চোখ জুড়িয়ে দেয়।
অনেকেই এই সময়টিতে ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকেন নদী পাড়ে বসে।
মতলবের বাসিন্দা ও সরকারি চাকরিজীবী মো. আলমগীর হোসেন বেপারী বলেন,
“প্রতি ঈদেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়ি আসি। এবার লম্বা ছুটি পেয়েছি, তাই মেঘনার পাড়ে ঘুরতে এসেছি।
এখানকার প্রকৃতি মনকাড়া—জন্মভূমির এমন সৌন্দর্য দেখার অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম।”
সৌদি আরব থেকে ঈদে বাড়ি ফেরা প্রবাসী মো. শাহ আলম বাদশা জানান,
“বিদেশে দীর্ঘ সময় স্ত্রী-সন্তান ছাড়া থাকতে হয়, তাই ঈদের এই সময়টা পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
মেঘনার তীরের প্রকৃতি, বাতাস, ঢেউ আর সূর্যাস্ত—সব মিলিয়ে অনন্য এক অভিজ্ঞতা।”
তার স্ত্রী মিলি আক্তার জানান, “পরিবারের সবাই মিলে এসেছি ঘুরতে।
সন্ধ্যার সময়টায় মেঘনা পাড়ে বসে সময় কাটানো দারুণ লাগে।
তবে আরও নিরাপদ ও আলোকিত পরিবেশের জন্য এখানে পর্যাপ্ত সোলার বাতি স্থাপন করা জরুরি।”
পর্যটন ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি
ভ্রমণপিপাসুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মোতায়েন রয়েছে প্রশাসনের তীক্ষ্ণ নজরদারি।
মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রবিউল হক জানান, “পর্যটকদের যাতে কোনো হয়রানি বা দুর্ঘটনার মুখোমুখি না হতে হয়, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নৌভ্রমণ ও সাঁতারসহ সবকিছুতেই সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “মতলবের মেঘনা পাড় একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা।
সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এই এলাকাটিকে একটি পরিকল্পিত ও আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ চলছে।”
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে মতলবের মেঘনা পাড় খুব দ্রুতই দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে।
ঈদ উপলক্ষে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর পাড়জুড়ে ছিল পর্যটকদের ভিড়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদীর ঢেউ ও সূর্যাস্ত উপভোগ করতে ছুটে আসেন হাজারো মানুষ।
প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নিরাপত্তা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত থাকায় পর্যটকরা স্বস্তিতে ঈদের ছুটি কাটাতে পেরেছেন।
এলাকাটি এখন আরও পরিকল্পিত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগও চলছে।

